শীতকালীন ঘাস চাষ (পর্বঃ১): ভূট্টা চাষ

0
5476


শীত কাল দরজায় এসে কড়া নাড়ছে।আর সাথে সাথে ঘাস লতা পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।তাহলে গরু খাবে কি?
সেটাই তো ভাবছেন! কিছু ভাববেন না।শীতে ভাল ফলন হয় এরকম অনেক ঘাস আছে।এ ঘাসগুলো শীতেই ভাল হয়।বলুন তো সে গুলো কি?আমি কয়েকটির নাম বলছি

  1. ভূট্টা
  2. মাসকলাই
  3. কাউপি
  4. খেসারী
  5. জোয়ার
  6. বাজরা
  7. বালি
  8. ওটস
  9. জাম্বু
  10. ট্রিটিক্যালি ইত্যাদি

প্রথমে আসি ভূট্টার কথায়।ভূট্টা গরু,ছাগলের জন্য খুবই পুষ্টিকর একটি খাদ্য।এর পাতা,ফল,গাছ সবই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার যায়।আপনি কি জানেন বাংলাদেশে কত ধরনের ভূট্টা আছে।তাহলে প্রথমেই আমরা জানব ভূট্টার জাত সম্পর্কে।

জাতঃ

বাংলাদেশে অনেক ধরনের ভূট্টা আছে।তন্মধ্যে উল্ল্যেখ্য যোগ্য হল সাভার-১,বর্নালী,শুভ্রা,খই ভূট্টা,জেমি।ডি,এম,আর ইত্যাদি।তবে কাঁচা ঘাসের জন্য সবচেয়ে ভাল হল সাভার-১।আসুন জেনে নেই এটি কীভাবে চাষ করতে হবে?

কোন ধরনের জমিতে চাষ করবেন?

সাধারনত সবধরনের মাটিতেই এটি চাষ সম্ভব তবে বেলে ও ভারী এঁটেল মাটি এ ঘাস চাষ না করাই ভাল।রবি মৌসুমে  উঁচু ও মাঝারি জমি এবং খরিপ মৌসুমে উঁচু জমি যেখানে পানি জমে না সেখানে  ঘাস ভাল জন্মে।মোট কথা জমিতে পানি জমে থাকলে সে জায়গাতে ভূট্টা চাষ না করাই উত্তম।

বীজ বপনের উপযুক্ত সময় কখন?

সেই কথা তো আগেই বললাম।সাধারনত অক্টোবর/নভেম্বর মাসে এবং মার্চ/এপ্রিল মাসে যেসমস্ত জমিতে পানি জমে থাকে না সেখানে এ ঘাস চাষ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।তবে যদি মনে করেন আপনি বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করছেন,তাহলে রবি মৌসুমই ভাল হবে।

বীজ কি নিয়মে লাগাবেন?

প্রথমে ভাবতে হবে আপনি কি কাঁচা ঘাসের জন্য লাগাবেন নাকি ভূট্টা গাছ অথবা ভূট্টার জন্য লাগাবেন।যদি এমন হয়,আপনি শূধু কাঁচা ঘাসের জন্য লাগাবেন তাহলে বীজ ঘন ভাবে বপন করতে পারেন।আর যদি ভূট্টা গাছ এবং দানা নিতে চান তাহলে তো অবশ্যই একটূ ফাঁকা ফাঁকা করে লাগাতে হবে।

সাধারনত দুই সারির মাঝখানে দূরত্ব ৩০ সেন্টি মিটার বা ১ ফুট রাখতে পারেন।আর দুই গাছের পাঝে দূরত্ব হবে ৫-৮ ইঞ্চি বা ২-৩ ফুট।

কতটুকু বীজ লাগবে?

প্রতি একরে যদি আপনি ২০-৩০ কেজি ভূট্টা লাগান তাহলে প্রচুর কাঁচা ঘাস পাবেন।আর যদি ভেব থাকেন যে দানা উৎপাদন করবেন তাহলে একর প্রতি ১০-২০ কেজির বেশি না লাগানো ভাল।

বীজ লাগাবেন কি ভাবে?

বীজ লাগালোর পূর্বে জমি তৈরি করে নিতে হবে।সে ক্ষেত্রে আপনাকে যেটা করতে হবে তা হল জমি ৩-৪ বার চাষ দিয়ে ভাল করে আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে।

ঘাসের জন্য হলে,
এরপর ১ ফুট দূরত্বে সারি করে নিয়ে সারি বরাবর কাঠের হাত লাঙ্গল দিয়ে ১-১.৫ ইঞ্চি গর্ত করে নিয়ে গর্তের মধ্যে  ২-৩ ইঞ্চি পরপর বীজ ফেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
দানার জন্য হলে,
১ ফুট দূরত্বে সারি করে নিয়ে সারি বরাবর কাঠের হাত লাঙ্গল দিয়ে ১-১.৫ ইঞ্চি গর্ত করে নিয়ে গর্তের মধ্যে  ২-৩ ইঞ্চি পরপর বীজ ফেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।পরবর্তীতে দুই সারির মাঝখানের সারি তুলে পশূকে খাওয়াতে হবে ফলে দুই সারিরি দূরত্ব হয়ে যাবে ২ ফুট।তাছাড়া প্রতি  সারি থেকে মাঝে মাঝে ঘাস কেটে পাতলা করে ফেলতে হবে।ফলে একই লাইনে দুই গাছের দূরত্ব হবে ৮-১০ ইঞ্চি।

সার কতটুকু প্রয়োগ করবেন?

রবি মৌসুমে একর প্রতি

সার পরিমান (কেজি)
ইউরিয়া ১১০-১৩০
টিএসপি ৭০-৯০
এমপি ৫৫-৯০
জিপসাম ৬০-৭০
গোবর ২০০০

 

খরিপ মৌসুমে একর প্রতি

সার পরিমান (কেজি)
ইউরিয়া ৯০-১১০
এমপি ৫৫-৯০
জিপসাম ৪০-৬০
গোবর ২০০০
সার কীভাবে প্রয়োগ করবেন?

চাষ দেওয়ার শেষের দিকে এক-তৃতীয়াংশ (৩০-৪০ কেজি)ইউরিয়া ও অন্যান্য সারের সবটুকু জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।বাকি থাকে দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া।

যদি রবি মৌসুম হয় তাহলে বীজ গজানোর ৪০-৪৫ দিন পর( ৮ পাতার সময়) এই ইউরিয়ার অর্ধেক  ছিটিয়ে দিতে হবে।বাকি অর্ধেক দিতে হবে পুরুষ ফুল বের হওয়ার আগে অর্থাৎ বীজ লাগানোর ৭০ – ৭৫ দিন পর।

আর যদি খরিপ মৌসুম হয়,সেক্ষেত্রে বীজ গজানোর ২০-২৫ দিন পর বাকি ইউরিয়ার অর্ধেক অর্থাৎ ১৫-২০ কেজি উপরি প্রয়োগ করতে হবে।বাকি ১৫-২০ কেজি প্রয়োগ করবেন ৪০-৪৫ দিন বয়সে।এখানে খেয়াল রাখতে হবে,সার প্রয়োগের সময় জমিতে যেন পর্যাপ্ত রস থাকে।

জমিতে কখন সেচ দিবেন?

রবি মৌসুম অর্থা শীত কালে চাষ করলে সেচ দেওয়া প্রয়োজন।তবে এটি জমি ও মাটির প্রকারের উপর ভিত্তি করে কম বেশি হতে পারে।

সাধারনত বীজ গজানোর ৩৫-৪০ দিন পর প্রথম সেচ দিতে হয়।এরপর ফুল আসার পূর্বে অর্থাৎ ৭০-৭৫ দিন পর দ্বিতীয় বারের মত সেচ দিতে হয়।অবশেষে যখন গাছে দানা বাঁধতে শুরু করে তখন অর্থাৎ ৯০-১০০ দিন বয়সে যদি প্রয়োজন হয়  তাহলে তৃতীয়বারের মত সেচ দেওয়া যেতে পারে।

কাঁচা ঘাস কখন গরুকে খাওয়াবেন?

আপনি যখন ঠিক মত সার পানি দিতে থাকবেন,দেখবেন তর তর করে ঘাস গুলো কড় হয়ে উঠছে।তখন থেকে আপনি ঘাস হিসেবে কেটে এই ঘাস গরুকে খাওয়নো যায়।এসময় চাইলে আপনি সাইলেজও তৈরি করতে পারেন।
তবে ফুল আসার আগ মুহুর্তে বা ৫-১০% গাছে যখন ফুল আসেই সেই সময়টি গাছ কেটে বা সাইলেজ বানিয়ে গরুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত সময়।

দানা কখন সংগ্রহ করবেন?

দানা সংগ্রহ করতে হলে মোচা পাকার জন্য সময় দেওয়া জরুরী।আর যদি বীজের জন্য হয় তাহলে অবশ্যই বীজ পাকতে হবে।তা না হলে দানা সংগ্রহের কিছু দিনের মধ্যেই ফাংগাস এবং বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দানা ফুটোফুটো করে ফেলবে।আর দানাটি ছোবড়া হয়ে পড়ে থাকবে।এজন্য মোচা পেকেছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।কিভাবে বুঝবেন?খুব সহজ! মোচা খড়ের রং ধারন করে কিছুটা হলুদ বর্ন ধারন করলে  বুঝতে হবে মোচা পেকেছে।এসময় মোচা থেকে ছড়ানো বীজে গোড়া পরীক্ষা করলে কালো গোড়া দেখা যাবে।

বপনের পর কখন ফসল পাওয়া যায়?

বপনের ৫০-৬০ দিন পরেই আপনি ঘাস কেটে গরূকে খাওয়াতে পারবেন।

কত কেজি ঘাস পাওয়া যাবে?

প্রতি একরে গড়ে ১০-১২ টন ঘাস পাওয়া যেতে পারে।

তাই শীত কালে আর ঘাসের চিন্তা করেতে হবে না ।আজই নেমে পড়ুন ঘাস চাষের কাজে।আগামী পর্বে মাসকলাই চাষ নিয়ে লিখব।সেই পর্যন্ত www.facebook.com/farmerhope.page এ like দিয়ে সাথেই থাকুন।

পাকচুং ঘাস কীভাবে চাষ করবেন সেটা এই লিংক থেকে জেনে নিতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here