মাস কলাই চাষ করবেন কিভাবে?

0
6353

মাসকালাই সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই জানে।তবে যদি ভাল ফলন পেতে চাস সম্পর্কে জানা খুব জরুরী।তাই আজ মাস নিয়ে একটু কথা বার্তা বলব।শীতে দিনে যখন অন্যান বারমাসি ঘাসের ক্ষেতে আকাল  পড়ে তখন আপনাকে সকাল সকাল কাঁচা ঘাসের যোগান দিতে পারে এই অস্থায়ী ঘাসটি।আবার এই ঘাস থেকে যে ফল হয় অর্থাৎ মাস কালাইয়ের ডাল মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।আবার এই ডাল ভাঙ্গানোর পর  ভুষি হয় তাও পশূ খাদ্যে যুক্ত করে আপনি পশুর আমিষের চাহিদা পূরন করতে পারেন।তাহলে দেখুন একই অঙ্গে কত  গুন!

তাহলে আর দেরি কেন? আপানার যদি জমি থাকে তাহলে এখনি ভাবতে পারেন মাসকালাই চাষের কথা।যদি তাই হয় তাহলে নীচের লেখাগুলো পড়লে সঠিক পদ্ধতিতে এই ঘাসটি চাষ করতে পারবেন।

মাস কলাই কি?

মাস কলাই হচ্ছে দাল ফলস।এর ইংরেজি নাম black gram বা Urid beam এবং বিজ্ঞানের ভাষায় এড় নাম হল Vigna mungo.

কি কি জাতের মাস কলাই আছে?

বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিষ্টিটিউট কয়েকটি মাস কলাইয়ের জাত উদ্ভাবন করেছে ।তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল নীচের গুলোঃ

  1. বারি মাস-১(পান্থ)
  2. বারি মাস-২(শরৎ)
  3. বারি মাস-২(হেমন্ত)
  4. বিনা মাস-১ ইত্যাদি

এই ঘাস চাষের জন্য কেমন জমি নির্বাচন করবেন?

সাধারনত বেলে দোঁআশ মাটিতে এই ঘাসের ফলন ভাল হয়।তবে বালি মাটি ও লাল মাটিতেও এ ঘাসের আবাদ মোটামূটি ভাল হয়।তবে ভবনার কিছু নাই বাংলাদেশের প্রায় সব মাটিতেই এই ঘাস চাষ করা যায়।
এই ঘাসের জন্য সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন তা হল,এই ঘাস জমাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না।তাই যেই জমিতে জলাবদ্ধতা হয় বা হতে পারে ঐ জমিতে কোন ভাবেই এই ঘাস চাষ করা উচিত নয়।

কখন চাষ করলে ভাল হয়?

সাধারনত রবি মৌসুমে অর্থাৎ শীতের সময় এ ঘাস চাষ করতে হয়।তবে এপ্রিল-মে মাসে চাষ করে গরুকে কাঁচা ঘাস হিসেবে খাওয়ানো যায়।

কীভাবে চাষ করবেন ?

বীজ সাধারনত দুই ভাবে চাষ করা যায়।আপনি চাইলে ছিটিয়ে বীজ লাগাতে পারেন আবার আপনি চাইলে সারি করেও লাগাতে পারেন।
বাংলাদেশের কোন কোণ স্থানে দেখা যায় বর্ষার শেষে ধানের জমি হতে পানি চলে যাওয়ার পর ছিটিয়ে দেওয়া হয়।আবার চর ও হাওড় এলাকায় পানি চলে যাওয়ার পর অথবা চাষ দিয়ে ছিটিয়ে বুনলেফলন ভাল হয়।তাছাড়া রাস্তার ধারে,বাঁধের ঢালে বীজ বুনে দিলেও ভাল ফলন পাওয়া যায়।যদিই জমি উঁচু হয় সেক্ষেত্রে হালকা রকমের ৩-৪ বার চাষ ও মই দিয়ে বুনতে হবে।

তবে লাইন বা সারি করে বীজ বপন করলে ফলন ভাল হয়।সারিতে বীজ বপন করলে শ্রী থেকে সারির দূরত্ব ৩০সেঃমিঃ এবংগ্রাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০ সেঃমিঃ রাখতে হবে।বীজ ৩-৪ সেঃমিঃ গভীরতায় বপন করলে ভাল হয়।

কি পরিমান বীজ লাগতে পারে?

প্রতি একর প্রতি ৮-১০ কেজি বীজ হলে মোটামুটি ভাল উৎপাদন আশা করা যায়।

কিভাবে সার প্রয়োগ ও পানি সেচ দিবেন?

খুব সহজ।মাস কলাইয়ের জন্য তেমন সার বা সেচের প্রয়োজন হয় না।জম তৈরি করার সময় একর প্রতি ২০ কেজি টিএসপি ও ১০ কেজি ইউরিয়া সার দিলে চমৎকার উৎপাদন পাওয়া যাবে।এছাড়া যদি খামারের গোবর জমি চাষের সময় দিয়ে দেন ভাল ফলন পাওয়া যাবে।

কি কি রোগ হতে পারে?

ভাগ্য খারাপ হলে এ ঘাসের হতে পারে বিভিন্ন রোগ ।যেমনঃ

  1. হলুদ মোজাইক ভাইরাস সংক্রমন
  2. সারকো স্পাইরা ক্রয়েন্টা ছত্রাম সংক্রমন
  3. পাউডারি মিল ভিউ ইত্যাদি

তবে যে রোগই হোক না কেন, দ্রুত নিকতস্থ কৃষি বিভাগে যোগযোগ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কখন ঘাস গরুকে খাওয়ানোর উপযোগী হয়?

বীজ বপনের ৫০-৬০ দিন পর ঘাস গরুকে খাওয়ানোর উপযোগী হয়।এ সময় ঘাস কাটতে হবে।

ফলন কি পরিমান হয়?

সবুজ ঘাস হিসেবে কাটলে একর প্রতি ১০ টন হয়ে থাকে।তবে ভাল ভাবে চাষ করলে একর প্রতি ফলন ১২-১৫ টনও হতে পারে।

কিভাবে খাওয়াবেন?

আপনি চাইলে গরুকে চড়িয়ে খাওয়াতে পারেন।তবে সে ক্ষেত্র ঘাস অপচয়ের সম্ভাবনা থাকে।তাই ঘাস কেটে খাওয়ানোই উত্তম।

এটি কি শুকিয়ে সংরক্ষন করা যায়?

উত্তর হল “হ্যাঁ”।এটি সবুজ অবস্থায় কেটে শুকিয়ে সংরক্ষন করা যায়।

আরো জানতে পারেনঃ

১। ভূট্টা ঘাস চাষ পদ্ধতি

সহজ পদ্ধতিতে পাংচুং ঘাস চাষ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here