হাঁস পালন

                                   কোন জাতের হাঁস পালাবেন? 

যারা হাঁসের খামার করব বলে ভাবছেন তাদের জন্য হাঁসের জাত সম্পর্কে জানা খুব প্রয়োজন।কিছু হাঁসের জাত আছে যেগুলোর ওজন হয় বেশি আবার কিছু হাঁস আছে যারা ডিম দেয় বেশি।আমার এমনও কিছু হাঁস আছে যেগুলো শুধু সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পালন করা হয়।

ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের জাতঃ ধরেন আপনার কেঊ ছয় মাসের অধিক কাল হাঁস পালন করতে চান এবং বানিজ্যিকভাবে ডিম বিক্রি করতে চান তাহলে নিচের জাতের হাঁসগুলো পালন করতে পারেন।যেমনঃখাকী ক্যাম্পেবেল,জিনডিং,ইন্ডিয়ান রানার ইত্যাদি।

মাংস উৎপাদনকারী হাঁসের জাতসমুহঃযদি মনে করেন,কয়েক মাস পালন করে মাংসের জন্য বিক্রি করে দিবেন তাহলে নিচের জাতগুলো বাচাই করতে পারেন।যেমনঃ মাসকোভি,বেইজিং,রোয়েন,আইলেসবেরি ইত্যাদি।

সৌন্দর্যবর্ধক হাঁসের জাত সমূহঃ  এ জাতের হাঁসগুলো দেখতে সুন্দর হওয়ায় শোভা বর্ধনকারী হিসেবে এই হাঁস পালন করা হয়।যেমনঃ কেরোলিনা,ব্লু সুইডিস,ক্রিস্টেড হোয়াইট,ইস্ট ইন্ডিয়ান ইত্যাদি।

                                  হাঁসের ডিম  হতে কিভাবে বাচ্চা ফুটানো হয়?

সাধারনত ২৮ দিন তা দেওয়ার পর হাঁসে উর্বর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।তবে মাস্কোভী জাতের হাঁসের ডিম ৩৩-৩৫ দিনে ফুটে।আগের দিনে প্রাকৃতিকভাবে ডিমে তা দিয়ে হাঁস বাচ্চা ফুটাতো।তবে বর্তমানে কৃত্রিম পদ্ধতিতে একই সময়ে ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটানো যায়।

                                 হাঁস কিভাবে পালন করা যায়?

হাঁস আপনি বিভিন্নভাবে পালন করতে পারেন।যেমনঃ

১।সম্পূর্ন আবদ্ধ পদ্ধতিঃএই পদ্ধতিতে হাঁসকে সম্পুর্ন আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা হয়।

২।অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে রাত্রে হাঁসগুলো ঘরের মধ্যে রাখা হয় আর দিনের বেলা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়।এই পদ্ধতিতে সাধারনত বাড়ন্ত এবং প্রজননের জন্য যেই হাঁসগুলো ব্যবহৃত হবে তাদের পালানো সুবিধাজনক।

৩।মুক্ত পালন পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে সাধারনত গ্রাম অঞ্চলে হাঁস পালন করা হয়।সারা দিন বাইরে ঘুরে বেড়িয়ে রাতে বেলায় আবদ্ধ আবাসে চলে আসে।

                                    সহজে হাঁসের পরিচর্যা করবেন কিভাবে?

বয়সের উপর ভিত্তি করে হাঁসের পরিচর্যার ধরনও ভিন্ন হয়।তাই বিভিন্ন বয়সের হাসের পরিচর্যা বা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলাদা আলাদ ধারনা থাকা প্রয়োজন।সেই হিসেবে বাচ্চা অবস্থা, বাড়ন্ত অবস্থা,প্রি-লেয়ার অবস্থা,ডিম পাড়া অবস্থা—এই চার ধাপে ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন হয়।

বাচ্চা অবস্থায় পরিচর্যাঃ সাধারনত হাঁসে বয়স ০১ দিন থেকে শুরু করে ০৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত সময়ে এই ব্যবস্থাপনা চলে। বাচ্চা আনার  কয়েক ঘণ্টা পূর্বেই ঘর পরিষ্কার করে মেঝেতে ২-৩ ইঞ্চি পুরু লিটার(তুষ বা কাঠের গুড়া) বিছিয়ে দিতে হবে এবং ঘরের চার পাশে কাপড়/চট দিয়ে পর্দা টানতে হবে যাতে ঘরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে।এই সময় প্রয়োজনীয় তাপ নিশ্চিত করার জন্য ব্রূডিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। ২২-২৫ দিনে ডাক প্লেগ ভেক্সিন দিতে হবে।

বাড়ন্ত অবস্থায়( ৯ – ২১ সপ্তাহ) পরিচর্যাঃ এই সময় খেয়াল রাখতে হবে সব হাঁস যেন সমান ও সঠিক ভাবে বেড়ে উঠে।দিনের বেলা হাঁসগুলোকে জলাশয়ে ছেড়ে দিতে হবে।জলাশয়ে পর্যাপ্ত খাবার আপেলে রাতে থাকার জন্য ডিম পাড়া জাতের প্রতিটি হাঁসের জন্য ১-১.৫ বর্গফুট এবং মাংস উৎপাদনকারী জাতের প্রতিটি হাঁসের জন্য ১.৫ – ২.০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন হবে।এই বয়সে হাঁসকে দৈনিক ২-৩ বার খাবার দিতে হবে।৬০ দিন বয়সে ডাক কলেরা প্রথম ডোজ এবং ১৫ দিন পর বুষ্টার ডোজ দিতে হবে।

প্রি-লেয়ার (১৭-২০ সপ্তাহ) হাঁসের পরিচর্যাঃ এই বয়সের হাঁসগুলো দিনের বেলা সাধারনত জলাশয়ে থাকে ।রাতে থাকার জন্য ডিমের জাতের প্রতি হাঁসের জন্য ১.৫-২.০ বর্গফুট এবং মাংসের জাতের প্রতি হাঁসের জন্য ২.০-২.৫০ বর্হফুট জায়গা প্রয়োজন হয়।এদেরকেও দৈনিক ২-৩ বার খাদ্য দিতে হয়।এই সময় প্রতিটি হাসের জন্য প্রায় ১৭০ – ১৯০ গ্রাম খাদ্য দৈনিক প্রয়োজন হয়।

ডিম পাড়া (২১ সপ্তাহ – উর্ধ্বে) হাঁসের পরিচর্যাঃডিম পাড়া প্রতিটি হাসের জন্য গড়ে ১.৫-২.০ বর্গফুট স্থানের প্রয়োজন।এই সময় প্রতিটি হাস ১৫০-১৬০ গ্রাম খাদ্য দৈনিক খায়। মাংস উৎপাদনকারী প্রতিটি হাঁসকে এই সময় গড়ে দৈনিক ১৮০- ২০০ গ্রাম সুষম খাদ্য দিতে হবে।হাঁসের বয়স হিসেব করে সর্বশেষ ডাক প্লেগ ও কলেরা ভ্যাক্সিন দেখার তারিখ থেকে প্রতি ৫ মাস পর পর ১৫ দিন ব্যবধানে উভয় ভ্যাক্সিন দিতে হবে।কৃমির প্রাদূর্ভাব থাকলে প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর কৃমিনাশক ঔষধ দেয়া যেতে পারে।

                                     হাঁসে কি কি রোগ আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে?

মুরগীর তুলনায় হাঁসে রোগের পরিমান কম হলেও কিছু রোগ খামারীকে খুব কষ্টে ফেলে দেয়।তার মধ্যে কিছু হল ভাইরাস ঘটিত যেমনঃ ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস,ডাক প্লেগ, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি; ব্যাকটেরিয়া ঘটিত( যেমনঃ ডাক কলেরা,কলিবেসিলোসিস,বটুলিজম,এন্টারাইটিস,সালমোনেলোসিস ইত্যাদি) মাইকোপ্লাজমা জনিত (যেমনঃ মাইকোপ্লাজমোসিস) ফাংগাস জনিত( যেমনঃ এসপারজিলোসিস,আফলাটক্সিকোসিস ইত্যাদি) এবং পরিজীবি আক্রামনে( যেমনঃ অন্তঃ পরজীবি,উকুন,আঠঁলী ইত্যাদি)।

                                          কি কি ভেক্সিন/টীকা দিবেন?

হাঁসের দুটি মারাত্মক রোগ হল ডাক প্লেগ এবং ডাক কলেরা।তবে এই দুটি রোগেরই টীক পাওয়া যায় যা পুর্বে আলোচনা করেছি।

                                        সরকারীভাবে কোথায় পাবেন হাঁসের বাচ্চা?

সরকারী ভাবে স্থাপিত বেশ কিছু সরকারী হাঁসের খামার থেকে সরকারী ভাবে নির্ধারিত মূল্যে বিভিন্ন বয়সের হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন সাপেক্ষে পাওয়া যায়।তবে বেসরকারি ভাবেও বর্তমানে হাসের বাচ্চা পাওয়া যায়।সরকারী ভাবে চলমান এবং নতুন স্থাপনকৃত সরকারি হাঁসের ফার্মগুলো নাম ও অবস্থান আপনাদের সুবিধার্থে দেওয়া হল।তবে অনিবার্য করনে এ তথ্য পরিবর্তন হতে পারে।

চলমান হাঁসের খামার
১।কেন্দ্রীয় হাঁসের খামার,নারায়নগঞ্জ।
২।আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার,খুলনা/নওগাঁ/ফেনী/সুনামগঞ্জ/রাঙ্গামাটি।

সরকারিভাবে যেসব জেলাতে নতুন হ্যাচারীসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারসমূহ স্থাপিত হয়েছে সেগুলো হল ময়মনসিংহ,নেত্রকোনা,কিশোরগঞ্জ,ব্রাহ্মনবাড়ীয়া,হবিগঞ্জ,মাগুরা,মাদারীপুর,বাগেরহাট,গোপালগঞ্জ,
সিরাজগঞ্জ,কুড়িগ্রাম,নীলফামারী,পটুয়াখালী ও ভোলা।

তথ্য সূত্রঃ
১।লাভজনক হাঁস পালন ও রোগ চিকিৎসা – কৃষিবিদ এম.এ. আলম।
২।পারিবারিক পর্যায়ে হাঁস পালন – ডা.মো. আফজাল হোসেন এবং অন্যান্য।
৩। হাঁস পালন নির্দেশিকা – ডা. মকবুলার রহমান।
৪।লাভজনক পশুপাখি পালন ও আধুনিক চিকিৎসা – প্রফেসর ডা. এম.এ.সামাদ।
৫। বাংলাদেশের হাঁসের চাষ – ডা আব্দুস সালাম ও মো. আফটাব ঊদ্দিন।
৬। ইন্টারনেট।
৭। অন্যান্য।