ছাগল পালন

ছাগল বাচাইঃ

বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ছাগল পাওয়া যায়।তবে মাংস এবং চামড়া দিক থেকে আমাদের দেশীয় জাত ব্লেক বেংগলের অতুলনীয়।তাছাড়া নতুন খামারীদের জন্য এই জাতের ছাগল পালন তুলনা মুলকভাবে সহজ ও লাভজনক।তাই এই জাতের ছাগল দিয়েই আপনি শুরু করতে পারেন।

ছাগলের বাসস্থানঃ

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আলো-বাতাসযুক্ত স্থান ছাগল পালনের জন্য খুবই উপযোগী।তাই ছাগলের ঘর নির্মানের জন্য ভাল একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে।এবার বলি জায়গা কি রকম লাগতে পারে।

প্রতিটি পূর্ন বয়স্ক ছাগলের জন্য ১০-১৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন।আর প্রতিটি বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ৩-৮ বর্গফুট।যদি আপনি দুইটি ছাগী দিয়ে খামার শুরু করেন তাহলে বছর শেষে আপনার খামারে ১০ -১৩ টি বিভিন্ন বয়সের ছাগল হতে পারে।সেই হিসেবে ৬0(৬ X ১০) বর্গফুট আয়তনের একটি মাচা দিয়ে শুরু করতে পারেন।মাচার উচ্চতা ৩ ফুট।

ছাগলের বাচ্চা যত্নঃ

জন্মের পর পরই বাচ্চাকে পরিষ্কার করে নাভি থেকে ৩-৪ সেঃমিঃ নিচে কেটে দিতে হবে জীবানুমুক্ত অস্ত্র দিয়ে।এর পর শাল দুধ খাওয়াতে হবে।মা থেকে পর্যাপ্ত দুধ না পেলে প্রয়োজনে বিকল্প দুধ খাওয়াতে হবে।পাঁঠা বাচ্চাকে খাসি করতে হলে দুই সপ্তাহ বয়সে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

ছাগল ছানার খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

জন্মের পর প্রতিটি ছাগল ছানাকে দৈনিক ১৫০ – ২০০ গ্রাম শাল দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন তবে তা এক সাথে নয় কিছু সময় পর পর অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে।পরবর্তীতে ঘাস খাওয়া শুরু করলে দুধের পরিমান কমে আসবে।

বাড়ন্ত ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের ৩ – ১৫ মাস বয়স কালকে বাড়ন্ত সময় বলা হয়।বাড়ন্ত ছাগলের দৈনিক খাদ্য সরবরাহের পরিমাণের একটি তালিকা নিচে তুলে ধরলাম।

আনুমানিক বয়স (মাস)ছাগলের ওজন (কেজি)দানাদার খাদ্য সরবরাহ(গ্রাম)ঘাস/পাতা সরবরাহ/চরানো(কেজি)
১০০০.৪
১০০০.৬
১৫০০.৮
১০২০০১.০
১২২০০১.২
১৪২০০১.৫
১১১৬২০০১.৮
১২>১৮২০০২.০

 

দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

দুগ্ধবতী ছাগল তার ওজনের ৫-৬% হারে খাদ্য খেয়ে থাকে।নিচে ছাগলের দানাদার খাদ্যের একটি মিশ্রম উল্ল্যেখ করা হল।

উপাদানপরিমান (%)
চাল/গম/ভূট্টা ভাঙ্গা৩৫.০০
গমের ভূষি/কুড়া২৪.০০
খেসারী/মাসকলাই/অন্য ডালের ভূষি১৬.০০
তিল/সরিষা/নারিকেল/সয়াবিন/খৈল২১.০০
ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট২.০০
লবন১.০০
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স০.০৫

 

কাঁচা ঘাসঃ

বনিজ্যিকভাবে পালন করতে হলে ছাগলের জন্য পর্যাপ্ত ঘাসের ব্যবস্থা করতে হবে।সেই ক্ষেত্রে উন্নত জাতের ঘাস লাগাতে পারেন।যেমনঃ পাক চং নেপিয়ার,পারা ,স্প্লেন্ডিডা খাসারী,মাসকলাই,জার্মান ইত্যাদি।ছোট একটি জমিতে ( ১০ X ৫ বর্গমিটার ) লাগিয়ে দৈনিক ১২ – ১৪ কেজি ঘাস পেতে পারেন।যা দিয়ে অনায়সে ১০ -১২ টি বিভিন্ন বয়সের ছাগলের খাবার হয়ে যাবে।

প্রজনন ব্যবস্থাঃ

একটি ছাগী মোটামুটি ৪-৫ মাস বয়সেই যোবন প্রাপ্ত হয়।তবে শরীর স্বাস্থ্য সঠিকভাবে গড়ে না উঠা পর্যন্ত প্রজনন করানো ঠিক নয়।ছাগী ডাকে আসার ১২-৩৬ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করাতে হবে।ডাকে আসলে ছাগল ঘন ঘন ডাকা ডাকাডাকি করবে,অন্য ছাগীর উপর লাফ দিবে,প্রস্রাবের রাস্তা (যোনী মুখ) দিয়ে ঘন পিচ্ছিল পদার্থ নিঃস্বরন হবে যাকে আমরা মিউকাস বলি।ডাকে আসার অনেকগুলো লক্ষন গরুর ডাকে আসার লক্ষনের সাথে মিল আছে তাই এই লিংক থেকে আরো বিস্তারিত জানতে পারেন।

পাঠাঁর ব্যবস্থাপনাঃ

পাঠাঁর খাদ্য ব্যবস্থাপনা বাড়ন্ত ছাগলের মতই।তবে প্রজননের সহায়তার জন্য প্রতিটি পাঠাঁকে দৈনিক ১০ গ্রাম গঁজানো ছোলা দেয়া প্রয়োজন।২৮-৩০ কেজি ওজনের পাঠাঁর জন্য দৈনিক ৪০০ গ্রাম পরিমান দানাদার খাবার দিতে হবে।একটি পাঠাঁ ১০ মাস  থেকে ৩ বছর পর্যন্ত প্রজননক্ষম থাকে।

পাঠাঁর প্রজনন ব্যবস্থাপনাঃ

একটি পাঠাঁ সাধারনত ৩-৪ মাসে যৌবন প্রাপ্ত হয় কিন্তু ৮-৯ মাস বয়সের পূর্বে পাল দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।৩০ -৫০ টি ছাগীর জন্য ৩-৫ টি পাঠাঁই যতেষ্ঠ।

ছাগলের টীকা প্রদানঃ

ছাগলের প্রধান দুটি টীকা হল পিপির এবং গোট পক্স এর টীকা।তবে সবচেয়ে মারাত্মক হল পিপি আর রোগ। তাই ছাগল পালন করতে গেলে খামারের ছাগলকে অবশ্য পিপি আর এর টীকা প্রদান (বিস্তারিত) করতে হবে।

কৃমি নাশক প্রদানঃ

প্রতি ৪ মাস পর পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমি নাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।

ছাগলের রোগঃ

ছাগলের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ হল পি,পি,আর ।এছাড়াও আছে গোট পক্স,ডাইরিয়া,নিউমোনিয়া,গায়ের পশম ঝড়ে যাওয়া,চর্ম রোগ ইত্যাদি রোগ।ছাগল অসুস্থ হলে দ্রুত নিকটস্থ প্রাণিহাসপাতালে যোগাযোগ করুন।