টিকা কার্যকর না হওয়ার প্রধান ১০ কারন

0
3136

পশু-পাখি সুস্থ রাখার জন্য টিকা প্রয়োগ খুব গুরুত্ব পূর্ন।তবে টিকা সঠিকভাবে না দিলে সেই টিকা কাজ করে না।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করার জন্য টিকার ব্যবহার সঠিক হওয়া চাই।নিচে টিকা ব্যর্থ হওয়ার প্রধান ১০ টি কারন দেওয়া হলঃ

১। সুস্থ প্রাণিঃ

টিকা সবসময় প্রয়োগ করতে হবে সুস্থ পশু-পাখিকে।টীকা প্রদানের পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠার জন্য প্রাণিটি সুস্থ থাকা খুবই জরুরী।সংক্রামক রোগ বা কৃমিতে আক্রান্ত পশু-পাখিকে টীকা প্রয়োগ করা উচিত নয়।তাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না।অনেক দেখা যায় কোন একটা রোগ দেখা যাওয়ার পর ঐ রোগের টীকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।এ পদ্ধতিটি সঠিক নয়।বরং এতে করে খামারে যে পশু-পাখিগুলো সুস্থ থাকে সেগুলো দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়।

২। গর্ভবতী গাভীঃ

গর্ভবতী গাভীকে সব ঠিকা দেওয়া যায় না।আবার কিছু টীকা আছে যেটা গর্ভাবস্থায় প্রয়োগ করা যায়।তাছাড়া সব অবস্থায় টীকা প্রয়োগ করা যায় না।তাই এই ক্ষেত্রে টীকা প্রয়োগের পূর্বে চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে নেওয়া জরুরী।বিনা কারনে ঝুঁকি না নেওয়াই উত্তম।

৩।টীকা পরিবহনঃ

টীকা উৎপাদন থেকে শুরু করে খামারে প্রয়োগ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই টীকা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা তাপমাত্রায় রাখতে হয়।যাকে আমরা “কুল চেইন” বলি।এই কুল চেইন কোন একটা জায়গায় ভেঙ্গে গেলেই টীকার মৃত্যু ঘটে অর্থাৎ টীকাটি তার কার্যকারিতা হারায়।এই অকার্যকর টীকা প্রদান করে কোন লাভ হবে না।টীকা দিলেও খামারে ঐ রোগ দেখা দিতে পারে।তাই ল্যাবরেটরীতে উৎপাদনের পর থেকে এই ব্যাপারে পদক্ষেত গ্রহন করা হয়।তাপ প্রতিরোধক কুল-ভ্যান/কিন্টেইনার/ফ্লাক্সের মধে বরফ দিয়ে টিকা পরিবহবন করতে হয়।বরফ গলে গেলে পুনরায় বরফ দিতে হয়।এই কষ্ট যদি করতে না পারেন।তাহলে টিকা প্রদান বিফলে যায়।

৪।সূর্যের আলোঃ

খেয়াল রাখতে হবে টিকা যাতে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে না আসে।কারনে সূর্যের আলো এবং তাপের প্রভাবে টিকার গুনগতমান নষ্ট হয়।আর নষ্ট টিকা দিলে পাবেন কষ্ট।

৫।টিকা প্রয়োগের সময়ঃ

টিকা প্রয়োগের সঠিক হল সূর্য উদয়ের আগে অথবা সূর্যাস্তের পরে।সহজ কথায় বললে বলতে সকালে এবং সন্ধ্যায় টিকা প্রয়োগের সঠিক সময়।হোক না সেটা মুরগীর খামার হোক না সেটা গরুর বা ছাগলের খামার।গরমের মধ্যে ভর দুপুরে টিকা প্রয়োগ করলে কি হবে একবার ভেগে দেখুন।টিকা তো কাজ করবেই না বরং প্রাণিটির মৃত্যুর পর্যন্ত ভয় থাকে।

৬।টিকার সঠিক মিশ্রনঃ

টিকা প্রয়োগের পূর্বে টিকার বোতলের গায়ের নির্দেশনা সঠিক ভাবে পড়ে নিতে হবে।তাছাড়া কোন টিকা মিশ্রনের পূর্বে কোন নিয়মটি সঠিক ভাবে জানতে হবে।পরবর্তীতে টিকা প্রয়োগের জন্যও প্রয়োগের মাত্রা বা ডোজ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানতে হবে।ডোজ কম বা বেশি হলে টিকা কাজ করবে না।তাছাড়া বিপদেরও আশংকা থাকে।

৭। টীকা প্রয়োগের সরঞ্জামঃ

টিকা প্রয়োগ ও মিশনের সময় যে সমস্ত পাত্র ,সিরিঞ্জ-নিডল,ডাইলিউশনে জন্য ব্যবহৃত পাত্র,টিকা ব্যবহারকারীর হাত ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত হওয়া প্রয়োজন।অনেক সময় টীকা প্রয়োগের সময় পানি মিশানো হয়।খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন পরিষ্কার, জীবানুমুক্ত,আয়রনমুক্ত হয়।সরঞ্জাম পরিষ্কারের জন্য কোন ধরনের জীবানুমুক্ত করন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না।কেননা এটি টিকাকে নষ্ট করে দিতে পারে।

৮।টিকার মেয়াদঃ

মেয়াদ উত্তীর্ণ বা টিকার ব্যবহার করকাক যাবে না। সাধারন রঙ পরিবর্তন হয়ে গেলে সে টিকাও ব্যবহার করা যাবে না।তাছাড়া অনেক আগে ব্যবহারে এনে খামারের ফ্রিজে ফেলে রাখা টিকাও ব্যবহার করা যাবে না।এই ধরনের টিকা ব্যবহার করলে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা  থাকে বেশি।এখন সিদ্ধান্ত আপনার।

৯।টিকা প্রয়োগের স্থানঃ

সঠিক স্থানে সঠিক নিয়মে টিকা প্রয়োগ করতে হবে।অন্যথায় সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে গরুটি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।তাই যেই টিকা মাংস পেশীতে প্রয়োগ করার সেটে মাংস পেশীতেই প্রয়োগ করতে হবে।আর যেটি চামড়ার নীচে দেওয়া সেটি চামড়ার নীচে প্রয়োগ করতে হবে।চোখে প্রয়োগের টিকা পানিতে মিশিয়ে খাওয়ালে হবে না।

১০।এন্টিবডি টাইটারঃ

টিকা প্রয়োগের ফলে পশূ বা পাখিটির শরীরের অভ্যন্তরে এক ধরনের পদার্থ তৈরি হয় যাকে আমরা বলি “এন্টিবডি”। এই এন্টি বডিই প্রাণির শরীরকে রোগ থেকে বাঁচাই।অর্থাৎ রোগ প্রতি রোধের মুল হাতিয়ার হল এই এন্টি বডি।একেক রোগের এক এক ধরনের এন্টবডী।এই এন্টিবডি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে  থাকলে এরা শরীররে ঐ রোগ হতে দেয় না।কিন্তু এই এন্টিবডীর পরিমান কমে গেলে ঐ রোগ হতে পারে।এই পরিমানটাকে এন্টিবডি টাইটার বলে।বড় বড় খামারগুলোতে টীকা প্রয়োগের পূর্বে এই টাইটার মাপা হয়।যদি টাইটা কম থাকে তাহলে টীকা প্রয়োগের মাধ্যমে এই টাইটার বৃদ্ধি করে।কিন্তু সবার পক্ষে এটা সম্ভব হয়ে উঠে না।তাই যতদিন পর পর টীকা প্রয়োগের নির্দেশ থাকে ততদিন পর পর টিকা প্রয়োগ করতে  হবে।

সবশেষ বলি,নিয়মিত সঠিক নিয়মে টিকা প্রয়োগ করুন আর খামার নিরাপদ রাখুন।
গরুর টিকা,ছাগলের টিকা,মুরগীর টিকা,ভেড়ার টিকা সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here