দেশীয় পদ্ধতিতে খুব সহজে ঘি তৈরি করবেন কিভাবে?

0
6132

দুধ থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঘি তৈরি করা যায়।তবে খুব সহজে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঘি তৈরি পদ্ধতি নিয়ে আজকে আলোচনা করব।যারা ছোট খামারী অর্থাৎ যাদের খামারে দুধ উৎপাদন কম অথবা কোন দুর্যোগ জনিত কারনে আপনি যদি দুধ বিক্রি করতে  না পারেন তাহলে খুব সহজে এই পদ্ধতিতে দুধ থেকে ঘি তৈরি করতে পারবেন।কেউ যদি খাঁটি ঘি তৈরির উদ্দ্যেশ্যে দুধ কিনে ঘি তৈরি করতে চান তাহলেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।আসুন এবার আমরা ধাপে ধাপে ঘি তৈরি প্রক্রিয়াগুলো জেনে নিই।

প্রথম ধাপঃ (ভাল মানের দুধ সংগ্রহ)

ভাল মানের দুধ

ভাল ঘি তৈরির জন্য সবচেয়ে যেটি বেশি গুরুত্বপূর্ন তা হল ভাল মানের দুধ সংগ্রহ। দুধের গুনগত মানের উপর নির্ভর করব ঘি এর গুনগত মান।দুধের মধ্যে যে চর্বি বা ফ্যাট থাকে তার উপর নির্ভর করে ঘি এর পরিমান কতটূকু হবে।যদি ধরে নিই দুধে ৪% ফ্যাট আছে তাহলে মোটামুটি ভাবে ২৫-২৬ লিটার দুধ দিয়ে আপনি ১ কেজি খাঁটি ঘি পেতে পারেন।আর যেই গরুগুলো দানাদার খাদ্যের চেয়ে কাঁচা ঘাসের উপর বেশি নির্ভরশীল তাদের দুধ থেকে তৈরি ঘি এর গুনগত মান তুলনামুলকভাবে ভাল হয়।

দ্বিতীয় ধাপঃ (দুধ ফুটানো)

যে দুধ থেকে ঘি তৈরী করবেন তা একটি পরিষ্কার সিলভারের অথবা স্টীলের পাত্রে নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমান ফুটাতে হবে।যাতে কোন ক্ষতিকর জীবানু থাকতে না পারে। দুধ ফুটতে ফুটতে সর পড়া শুরু করলে ফুটানো বন্ধ করতে হবে।

দুধ ভাল করে ফুটাতে হবে

তৃতীয় ধাপঃ ( দুধের গাঁজন বা ফার্মেন্টেশন)

সহজ কথায় বলতে গেলে এই ধাপে সিদ্ধ দুধ থেকে দই তৈরি করা হয়।ফুটানো দুধকে ঘরের তাপমাত্রায় শীতল করে ঐ দুধের সাথে দই অথবা পুরনো দইয়ের পানি যুক্ত করতে হবে। আপনি চাইলে লেবুর রসের পানি বা তেতুল গুলানো পানি দিয়েও এই কাজটি করতে পারেন।তবে দইয়ের ব্যবহার সর্বোত্তম।আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হল, দুধের সাথে পরিমান মত দই মিশাতে হবে।সাধারনত প্রতি কেজি দুধের জন্য ১/২ টেবিল চামচ পরিমান দই দিলেই যতেষ্ঠ।

দুধের ফার্মেন্টেশন করে দইয়ে পরিনত করতে হবে

এই দই  উক্ত দুধের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে অন্ধকার শীতল স্থানে ডেকে রাখতে হবে প্রায় ৮ ঘন্টা।ধরেন আপনি যদি সন্ধ্যা বেলা দই মিশ্রিত করে রেখে দেন তাহলে সকাল বেলা সবটুকু দুধ দইয়ে পরিনত হবে।অর্থাৎ দুধের গাঁজন বা ফার্মেন্টেশন সম্পন্ন হবে।তাপমাত্রা, সংরক্ষনের পরিবেশ, দইয়ের ধরন, দুধের ফ্যাটের পরিমান ইত্যাদি কিছু বিষয়ের কারনে ফার্মেন্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় কম বেশি হতে পারে।

চতুর্থ ধাপঃ (মন্থন)

দই থেকে মাখন আলাদা করার জন্য দইকে ঘুঠনী দিয়ে ঘূটতে হবে।যারা নিয়মিত ঘি তৈরি করে তারা বিদ্যুৎ চালিত ঘুঠণী ব্যবহার করতে পারে।তবে যারা অনিয়মিত বা দূর্যোগকালীন অবস্থায় ঘি তৈরি করতে চান তারা বাজার থেকে সাধারন ঘূঠনী কিনেও ব্যবহার করতে পারেন।ঐতিহ্যগতভাবেও মাখন তৈরি জন্য বিশেষ ঘূঠনী ব্যবহৃত হয় যুগ যুগ ধরে।

কাঠের তৈরী ঘুঠনী
হাতে চালিত য়ান্ত্রীক ঘুঠনী

তবে ঘঠুণী যা দিয়েই তৈরি হক না কেন।ঘুঠার সময় নির্দিষ্ট একটি নিয়ম অনুসরন করতে হবে।তা হলে একবার ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে সেই দিকে(Clock wise) এবং পরের পার তার বিপরিত দিকে ঘুরাতে হবে (Anti clock wise) তাহলে ধীরে ধীরে মাখন(Butter) এবং ঘোল (Butter Milk) আলাদা হতে থাকবে।ইলেক্ট্রিক মেশিন দিয়ে করলে মাখনটাকে বিকেন্দ্রিকরন (Centrifugal) করা হয়।

পঞ্চম ধাপঃ (মাখন আলাদ করা)

পর্যাপ্ত পরিমান ঘুঠণীর পর মাখন এবং ঘোলের মিশ্রন থেকে মাখনকে আলাদা করতে হবে ।এর ফলে মাখনে তরলের পরিমান কমে যায়।ঘুঠনী যত ভাল হবে তত বেশি মাখন আলাদা কবে।মাখন আলাদ করার পূর্বে একটু ঠান্ডা পানি মিশ্রিত করা যেতে পারে।ফলে মাখন কিছুটা শক্ত হয়ে যাবে এবং আলাদা করা সহজ হবে।যদি কোয়েক বার করে মাখন তৈরি করতে হয় তাহলে প্রত্যেক বার তৈরি করা মাখন শীতল স্থানে সংরক্ষন করতে হবে।

মাখ পৃথক করত্র হবে

ষষ্ট ধাপঃ (মাখন জ্বাল দেওয়া)

মাখনের মধ্যেও জলীয় অংশ থাকে কিন্তু ভাল ঘি তৈরি করতে হলে তাকে জলীয় অংশ মুক্ত করতে হবে।তাই মাখন তৈরি পরবর্তী পর্যায়ে মাখন জ্বাল দিয়ে শূকিয়ে ফেলতে হবে।এজন্য একটি ষ্টীলের পাত্রে মাখন নিয়ে সেটাকে হালকা মাঝারী আঁচের আগুনে জাল দিতে হবে।জ্বাল দেওয়ার এক পর্যায়ে গিয়ে মাখন ফুটতে থাকবে এবং ফুট ফাট শব্দ শূরু করবে।তবে সেই শব্দও এক সময় কমে আসবে।

মাখন ভাল ভাবে জ্বাল দিতে হবে

সপ্তম ধাপঃ (ঘি সংগ্রহ)

সিদ্ধ হতে হতে এক সময় দেখবেন মাখন একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে এবং পাত্রের তলায় কিছু পদার্থে তলানী পড়েছে ।তখনই বুঝতে হবে ঘি তৈরির প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে।এসসয় আপনি খাঁটি ঘি এর সেই চির পরিচিত সুন্দর ঘ্রানটি পাবেন।আর দেরি না করে চুলা থেকে  পাত্র নামিয়ে ছাঁকনী দিয়ে ছেকেঁ ঘি আলাদা করে প্রয়োজনীয় পাত্রে সংরক্ষন করতে পারেন। মনে রাখতে হবে ঘি সব সময় শুকনো পাত্রে সংরক্ষন করতে হবে এবং আলো থেকে দূরে শুষ্ক স্থানে সংরক্ষন করতে হবে।

ঘি তোরীর চূড়ান্ত পর্যায়

এখবে ঘি তৈরি করে আপনি কয়েক মাস পর্যন্ত ঘি সংরক্ষন করতে পারেন এবং প্রয়োজন মত সময়ে ঘি বিক্রি অথবা ব্যবহার করতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here