পশুকে কৃমি আক্রমন থেকে বাঁচানোর উপায় (পর্ব-১): গোল কৃমি


গরু বলেন আর ছাগল বলেন শরীরে ভিতরে লাখে লাখে ঝাঁকে ঝাঁকে কৃমি থাকলে সেই গরুকে দিয়ে আর কিচ্ছুই হবে না। না দিবে দুধ না হবে মাংস।আর আপনার সব শ্রম যাবে বৃথা।তাই গরুকে কৃমি মুক্ত রাখতে পারলেই এসব ঝামেলা শেষ। আপনি হবেন সফল খামারী।আপনি চাইলে ঔষধ খাওয়ায়ে কৃমিকে ঠেকাতে পারেন।কিন্তু তা কতটুকু, তা কি ভেবেছেন?তবে বিষয়টা যদি এমন হয়,আপনার পশুর শরীরে কৃমি বাসা বাঁধার আগেই আপনি তাকে আটকাই দিলেন।হুম,এটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

এটা করতে গেলে আপনাকে জানতে হবে কৃমি পশুর শরীরে বাসা বাঁধে কি ভাবে?সেটাই আজকে বলব।
পশুর শরীরের মুলত পেটের মধ্যে যে সমস্ত কৃমি বাসা বাঁধে তাদেরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

১। গোল কৃমি

২। কলিজা কৃমি
৩। ফিতা কৃমি

একেকটা কৃমি একেক ভাবে পশুকে ঘায়েল করে।প্রথমে বলি গোল কৃমির কাণ্ড কারখানা।
এই কৃমি গুলো পেটের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ায় এমন কি ফুসফুসে পর্যন্ত বাসা বাধঁতে পারে।
বাচ্চা বয়সে এই কৃমির বাচ্চাগুলো(Larvae)গুলো ঘাস বা মাটির মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।যার যখনি পশু ঐ ঘাস খায় অমনি কৃমির বাচ্চা পেটের ভিতর ঢুকে যায়।ঢুকেই সে তার কাণ্ড কীর্তি শুরু করে দেয়।

লার্ভা

এই বাচ্চাগুলো পেটের মধ্যে রাজার হালে খেয়ে দেয় বড় হয়ে বিয়ে সাদি সংসার শুরু করে।আর মহিলা কৃমিগুলো ডিম পাড়া শূরু করে।এই বাচ্চা থেকে ডীম পাড়ার জন্য ২- ৪ সপ্তাহই যতেষ্ঠ।এই ডিম গুলো পশুর পায়খানা মাধ্যমে গোবরের সাথে মিশে পশূর শরীরে বাইরে চলে আসে।

কৃমির ডিম

কয়েকদিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে থাকে।আর গায়ে গোতরে বড় হতে থাকে অন্য পশূর পেটে ডূকার জন্য। ডিম থেকে ফুটে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত সময়টা গরম কালে কয়েকদিন হলেও শীত কালে কিন্তু কয়েক সপ্তাহও লাগতে পারে।

এই লার্ভা দ্বারা আক্রান্ত ঘাস বলেন আর মাটি বলেন অথাবা অন্য খাবার বলেন,খেলেই এই কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভবনা থাকে।

কখন পশূ বেশি আক্রান্ত হয়?

সাধারনত বসন্ত কালে এবং শরতের শুরুর দিকেএ রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি দেখা দিতে পারে।কারন এই সময়
সময় মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা কৃমির বাচ্চা (Larvae) গুলো ঘাসের উপরে উঠে আসে আর ওত পেতে বসে থাকে শিকার ধরার জন্য।তাই এই সময়ে পশূকে ঘাস এবং খাদ্য খাওয়ানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
তবে শীতকালে এর দৌরাত্ত্ব তুলনা মুলক ভাবে অনেক কম থাকে।

গোল কৃমি পশুর কি ক্ষতি করে?

পেটের ভিতরের পাকস্তলীর একটা অংশে (Abomasum) তার ছিদ্র করে ঢুকের পড়ে রক্ত নালীর মধ্যে আর আরা করে রক্ত খেতে থাকে। ফলে পশুর দেহের রক্ত চলের যায় কৃমির পেটে।এদিকে পশুর  শরীর হয়ে যায় রক্ত শুন্য (Anaemeia).শরীরের রক্ত শূন্যতা দেখা দিলে পশূ মারাও যেতে পারে।

পাকস্থলীতে কৃমি

আরো মারাত্মক হল এটা পাকস্তলীর (Abomasum) এর গায়ে লেগে থাকা বিভিন্ন গ্রন্থি (Gland) ছিদ্র করে ফেলে।এই গ্রন্থগুলো থেকে মুলত হজম রস (Enzyme) বের হয় বের হয়। এই গ্রন্থিগুলো নষ্ট হওয়ার কারনে আর হজম রস বের হয় না।তাই পশুকে যতই খাওয়ান না কে হজম আর হবে না।ফলে দেক্ষা যাবে পশু মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা করে। আর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে কংকাল সার গরু ছাগলে আপনার খামার ভরে যাবে।

কীভাবে বুঝবেন আপনা খামারে গোল কৃমির সংক্রমন আছে?

শরীরে কৃমির পরিমান যদি কম হয় তাহলে পশূর শরীর এটা মেনে নেয়।তাই কিছুই বুঝা যায় না।কিন্তু যদি লোড বেশি হয় তাহলে পশু মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা করবে।আর লোড তার চেয়েও বেশী হলে পশু নিয়মিত পাতলা পায়খানা করবে।আর রুচি কমে যাবে।পরবর্তীতে পশু শুকিয়ে যায়।আর সর্বশেষ ফলাফল অকাল মৃত্যু।

কীভাবে এই কৃমির ব্যাপারে নিশ্চিত হবে?

খুব সহজ ।আপনি সন্দেহ জনক পশুর গোবর নিয়ে নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ দপ্তর, এফ,ডি,আই,এল, সিডিআইএল এ পরীক্ষা করাতে পারেন।অথবা কোন বেসকারী প্রতিষ্ঠান (যদি থাকে) সেখান থেকেও পরীক্ষা করে এই কৃমির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন।

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?

এই কৃমি প্রতিরোধের জন্য এখন বাজারে অনেক ধরনের কৃমি নাশক পাওয়া যায়।সাধারন বসন্তের আগে এবং শরতের শুরুতে কৃমি নাশক প্রয়োগ করলে এই কৃমিকে আটকানো যাবে।কারন এই সময় ঔষধ প্রয়োগ করলে প্রাপ্ত বয়স্ত কৃমিগুলো মারা যারা এবং বাচ্চা কৃমিগুলোও আর বড় হতে পারবে।আর আপনার পশূ থাকবে নিরাপদ।

আগামী পর্বে কলিজা কৃমির ভয়াবহতা নিয়ে লিখব সেই পর্যন্ত

www.facebook.com/farmerhope.page এ like দিয়ে সাথে থাকুন।

0 responses to “পশুকে কৃমি আক্রমন থেকে বাঁচানোর উপায় (পর্ব-১): গোল কৃমি”

  1. Md. Akter Hossain

    Very helpful websit

  2. Md. Akter Hossain

    Very helpful website

  3. schayan

    Thank you

  4. schayan

    Thank you