১।বাচ্চা প্রসবের সঠিক সময় জানাঃ
এটি হচ্ছে গর্ভবতী গাভীর নিরাপত্তার প্রথম ধাপ।গর্ভবতী গাভীর সুরক্ষার জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন (বীজ দেওয়া) করানোর পর করদিন পর বাচ্চা হবে যাকে আমরা গর্ভধারন কাল বলি।একটি গাভীকে বীজ দেওয়ার পর ২৭০ থেকে ২৯০ দিনের মধ্যে সাধারনত বাচ্চা দেয়।তাই বীজ দেওয়ার পরই আপনার জেনে নিতে হবে সম্ভাব্য কত দিন পরে প্রসব হবে।সেই হিসেবে আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে।এই ক্ষেত্র আপনি কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর কাজ থেকে লিখে নিতে পারেন সম্ভাব্য কত দিন পর গাভীটি বাচ্চা দিতে পারে।
২। আলাদা বাসস্থানঃ
গর্ভকালের ৭ মাস পর্যন্ত গাভীর দেখা শোনা, খাদ্য ,পরিচর্যা ,দুধ দোহন সবই স্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকবে।কিন্তু ৭ মাসে পরার সাথে সাথে গাভিটি বিশেষ যত্ন প্রত্যাশা করে।কারন এই সময়ই থেকে গর্ভস্থ বাচ্চাটির বৃদ্ধি খুব দ্রূত হয়। এ বাড়তি পরিচর্যার প্রথম কাজ হিসেবে গাভীটিকে অন্যান্য গাভী থেকে আলাদা করতে হবে।এই সময় গাভির পূর্ন বিশ্রাম প্রয়োজন।আর দিতে হবে বাড়তি খাবার,বাড়তি পরিচর্যা।থাকার ঘরটি গাভীর উপযোগী হওয়া বাঞ্চনীয়।
তাছাড়া এক সাথে থাকলে এই গাভীর উপর অন্য গরু লাফিয়ে উঠতে পারে।এর ফলে গর্ভের বাচ্চা নষ্টও হয়ে যাতে পারে।তাই সাবধান!
৩।স্বাস্থ্যকর পরিবেশঃ
যে ঘরে আপনি গর্ভবতী গাভীকে রাখবেন সেটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া চাই।যতে কোন ধরনের জীবানু সংক্রমন না হয়।আর ঘরে অবশ্যই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে, যাতে গরু নড়া চড়া ও ওঠা-বসা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। কারন এসময় একটি ধাক্কা খেলেও গর্ভাপাত হয়ে যেতে পারে।গর্ভবতী গাভীর ঘর প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।প্রয়োজনে হালকা জীবানু নাশক মিশিয়ে পানি দিয়ে ঘুয়ে দিতে হবে।এতে করে ঘরে রোগ জীবানুর পরিমান অনেক কমে যাবে।
গাভীর থাকার জায়গাতে খড় বিছিয়ে দিয়ে আরাম দায়ক বিছানা তৈরি করতে হবে।খড়ের সরবরাহ খুব কম হলে দৈনিক রোধে শুকিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।তবে বিছানার খড় নোংড়া হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করে নতুন করে দিতে হবে।
৪। দুধ দোহন কমিয়ে বন্ধ করতে হবেঃ
গর্ভাবস্থার ৭-৮ মাসে দুধ দোহন বন্ধ করতে হবে।তবে তা হঠাৎ করে নয়।দুধের প্রবাহ বন্ধ না হলে দানাদার খাদ্য কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে, তবে গাভীর স্বাস্থ্য যাতে ভেঙ্গে না যায় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
৫। গাভীকে শান্ত রাখতে হবেঃ
গর্ভাবস্থায় গাভীর জন্য শান্ত ঝামেলা মুক্ত পরিবেশ খুব প্রয়োজন।এই অবস্থায় গাভীকে কোন ভাবেই ভয় পাওয়ানো, দ্রুত তাড়ানো বা উত্তেজিত করা যাবে না।অস্থির হয়ে লম্প-ঝম্প করতে গিয়ে কম্প হয়ে গর্ভের বাচ্চাটির মহা সর্বনাশ হতে পারে।
৬। অতিরিক্ত সুষম খাদ্যঃ
দুধ উৎপাদঙ্কারী গর্ভবতী গাভীর দুধ উৎপাদনের শেষ ভাগে দেহের সঞ্চিত ভিটামিন, মিনারেল,চর্বি ও অন্যান পুষ্টিকর উপাদান সমূহ দুধের মাধ্যমে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়।গর্ভাবস্থার শেষের দিকে গর্ভস্থ বাচ্চাটি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই এই সময়ই গাভীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ও গর্ভস্থ বাচ্চার স্বাভাবিক বাড়ন অক্ষুন্ন রাখার জন্য ২-৩ মাস অতিরিক্ত সুষম খাদ্য ও বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
গাভীর স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে এসময় কাঁচা ঘাসের সাথে ২-৩ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়ালে ভাল হয়।গর্ভাবস্থার শেষ দিকে গাভীর সুষ্টু যত্ন ওসুষম খাদ্যের অভাব হলে গাভী ও গাভীর বাচ্চা স্বাস্থ্যহানি ঘটে।অপর দিকে দুধ উৎপাদন কমেভ যায়।এমন কি গাভী মারাত্মক দুগ্ধ জ্বরে(Milk Fever) আক্রান্ত হতে পারে।
আর খেয়াল রাখতে হবে গাভীর জন্য যেন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা থাকে।শীতের সময় হলে কুসুম কুসুম গরম পানি খাওয়াতে পারলে খুব ভাল হয়।আর গরমের দিনে হলে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে।এতে করে পেট ফাঁপা, ঠাণ্ডা লাগা,সর্দি -কাঁসি, নিয়মোনিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ঝামেলা থেকে গাভীটি এবং সাথে সাথে তার অনাগত বাচ্চাটি মুক্ত থাকবে।
৭। বাচ্চা প্রসবের পূর্ববর্তী সপ্তাহে গাভীকে “বাচ্চা প্রসব ঘরে” স্থানান্তরঃ
বাচ্চা প্রসবের ২-৩ দিন পূর্বে গাভীর ওলান ও যোনিমুখ স্ফিত হয়।এ সময় গাভীকে বাচ্চা প্রসবের ঘরে নিয়ে আসতে হবে।তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত পক্ষে এমন একটি ঘরে রাখতে হবে যে ঘর নিরাপদ ও সব সময় চোখে চোখে রাখা যায়।
৮।গাভীর যোণি মুখ বের হওয়া ঠেকানোঃ
এই সমস্যার কারনে বিপদে পড়েছেন সেই রকম অনেকেই আছে।যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে আপনার আর বিড়ম্বনার শেষ নেই।আর এই ঘটনাটি ঘটে যখন বাচ্চা দেওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে।এই সমস্যার মূল কারন হল গাভীর কোষ্ঠ্য কাঠিন্য অথবা হতে পারে তার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিন-মিনারেলের অভাব রয়েছে।যদি তাও না হয় তাহলে বুঝতে হবে গাভীটি খুবই দুর্বল।
এই ঘটনা না হওয়ার জন্য আগে থেকেই আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে ।সেটা কি? সেটা হল, বাচ্চা প্রসবের ২-৩ সপ্তাহ আগে থেকে গরুকে সহজে হজম হয় এবং শরীর ঠাণ্ডা থাকে এরকম খাবার দিতে হবে।আর খাবার যদি রসালো এবং আশঁ যুক্ত হয় তাহলে আরো ভাল হয়।
৯। ওলান ফোলা প্রতিরোধঃ
এই রোগটা অনেক সময় আপনার কষ্টের কারন হতে পারে।সাধারনত বাচ্চা দেওয়ার সময় যখন সন্নিকটে হয় তখন এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।যদি এ সমস্যা থেকে গরু মুক্ত রাখতে চান তাহলে গরুকে প্রতি দিন ব্যায়াম করানোর অভ্যাস করুন।সেটা হতে পারে প্রতি দিন আধা ঘন্টা থেকে এক ঘণ্টা।তবে তার জন্য জিমে (Gym) নেওয়ার দরকার নাই।খামারের মধ্যে অথবা খামার থেকে বাইরে নিয়ে একটু হাঁটালেই হবে।দেখবেন, খুব ভালো ফল দিচ্ছে।
১০। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পুরনঃ
গর্ভকালের শেষের দিকে বাচ্চার বৃদ্ধি যখন খুব দ্রুত হতে থাকে তখন আপনাকে খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম যুক্ত করতে হবে।কিন্তু কতটুকু ? তা নির্ভর করবে গাভীর শারীরিক অবস্থার উপর।তবে কোন অবস্থাতেই গাভীকে ক্যালসিয়াম ঘাটতিতে ফেলা যাবে না। কারন এই সময় ক্যালসিয়া্মের অভাবে বাচ্চার বৃদ্ধি মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।তাছাড়া সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে প্রসবের সময়।প্রসবকালীন সমস্যা,প্রসবের পর ফুল না পড়া,প্রসবের পর গাভী শুয়ে পড়া সহ নানাবিধ সমস্যা আপনাকে অস্থিত করে তুলবে।তাই বলি,শুধু শুধু কি দরকার হাতে টেনে ঝামেলায় পড়ার!