আধা ঘণ্টার ও কম সময়ে ফর্মাল পোশাকেই পৌঁছে গেলাম অসহায় গাভীটির কাছে।তখন গাভীটি মাথা ছেড়ে দিয়ে অনেকটা নির্জীব হয়ে শুয়ে আছে।বুঝতে বাকি রইল না,গাভী খুব বিপদের মধ্যে আছে।বাধ্য হয়ে নগ্ন হাত জীবানুমুক্ত করে, জরায়ু palpate করে বাচ্চার position & posture পরীক্ষা করে বুঝলাম এটা dystokia case. অর্থাৎ প্রসবের জন্য বাচ্চার যেই ভাবে থাকার কথা সে ভাবে না থেকে মাথা উল্টে গিয়ে আটকে আছে। তাই গাভীর জরায়ুর চাপ থাকা সত্ত্বেও প্রসব হচ্ছে না।হাত দেওয়ার পর দেখলাম পেটের ভিতর থাকা বাছুরটি আমার আঙ্গুল চুষছে আর বের হবার জন্য ছটফট করছে।অনাগত বাচুরটির জন্য খুব মায়া হল।তাই উপস্থিত দুই জন লোককে নিয়ে লেগে পড়লাম displacement correction এর কাজে।
Mother’s Love |
জরায়ূর অনেক চাপ ও তাপ সহ্য করে প্রায় ১০ মিনিট চেষ্টার পর বাচুরের position normal করতে পেরলাম।তখন হাত ব্যথায় প্রায় অবশ হবার মত অবস্থা ।তারপরও, প্রায় সাথে সাথেই স্থানীয় লোকদের সহায়তায় বাচুরটাকে মাতৃ গর্ভ থেকে বের করে পৃথিবীর আলোয় নিয়ে আসতে সক্ষম হলাম।মা প্রসব যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেল।
অপার্থিব একটা শান্তি অনুভব করলাম।খামারীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে হাসিই তো আমার পরম পাওয়া।আর কি চাই বলুন তো! নিখুঁত বাচ্চাটিকে তার মা পরম স্নেহে আদর করে চেটে দিচ্ছিল।পরম করুনাময় সৃষ্টি কর্তাকে, চোখ বুজে ধন্যবাদ জানালাম আমাকে এই জ্ঞান দেওয়ার জন্য,যার মাধ্যমে আমি একটি প্রাণিকে প্রসব যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে পারলাম।
এখানে কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্ব পূর্ন সেটা হল,
- খামারী যখন অস্বাভাবিক অবস্থা বুঝতে পারে তখন সাথে সাথে আমার মাঠকর্মীর সাথে যোগাযোগ করেন।
- ঐ মাঠ কর্মী অবস্থা জটিল বুঝতে পেরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সরনাপন্ন হবার পরামর্শ দেয়।
- খামারী দ্রুত প্রানী চিকিৎসকের সরনাপন্ন হন।
- অল্প সময়ে গাভী এবং বাচুর সুস্থ অবস্থায় প্রসব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
Happiness of farmer |
তাই প্রসবকালীন জটিলতায়,দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়াই সব চেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ ।
লেখকঃ ডাঃ সুচয়ন চৌধুরী,
ভেটেরিনারি সার্জন