বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খরগোশ পালন অত্যন্ত লাভজনক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ,যেমনঃ আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড এবং চীন জাপানসহ অনেক দেশে বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ প্রতিপালন করা হয। তবে বাংলাদেশ ইহার পালন এবং মাংস জনপ্রিয়তা অর্জন করে।বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজাতির খরগোশ দেখা যায় তার মধ্যে সাদা কালো এবং খয়েরি রঙের খরগোশ বেশি।
খরগোশের কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য
১।তাপমাত্রাঃখরোশের তাপমাত্রা গড়ে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে।
২।নাড়ির স্পন্দনঃ ১৫০-৩০০বিট/প্রতি মিনিট। খুব ছোট খরগোশের হৃদয়ের স্পন্দন বেশি হয় ৩।শ্বাস-প্রশ্বাসের হারঃ ৩০ থেকে ১০০/প্রতি মিনিট। প্রাপ্তবয়স্ক ঘরে 5 থেকে 50/প্রতি মিনিট ৪।দুগ্ধদান কালঃ প্রতিটি খরগোশ গড়ে ৪২ দিন তাদের বাচ্চাকে দুগ্ধ দান করে।
৫।বাচ্চা প্রদানের হারঃ প্রতিটি মাদী খরগোস এক বছরে ২ থেকে ১০ টি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। সাধারণত প্রদর্শনীতে থাকা খরগোশের বাচ্চা কম হয় তবে অভ্যন্তরীণ ফার্মে ব্যবহৃত খরগোশের বাচ্চা সংখ্যা বেশি হয়।
৬।জীবনকালঃ খরগোশ ঘরে ৬ থেকে ১১ বছর বেঁচে থাকে। পূর্ণতা প্রাপ্তির বয়স ১৬ থেকে ২৬ সপ্তাহ তবে ছোট জাতের খরগোশের পূর্ণতা প্রাপ্তি আগে ঘটে।
৭।গর্ভধারণ কালঃ গর্ব কাল ৩০ থেকে ৩২ দিন। তবে এটি কোন কোন ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৩৪ দিন হতে পারে। প্রাপ্ত বয়স্ক খরগোশের ওজন ১ থেকে ১.৫ কেজি। তবে খুব কম ক্ষেত্রে ১২ কেজি পর্যন্ত হয়।
৮।সেক্স রেশিওঃ 100 পুরুষ অনুপাত 102 স্ত্রী খরগোশ।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন জাতের খরগোশঃ
ডার্ক গ্রে নেটিভ
বাংলাদেশ এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ ঢাকা এবং যশোর অঞ্চলে এ জাতের খরগোশ দেখা যায় এদের গায়ের রং গাঢ় ধূসর এবং প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক খরগোশ ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এরা খুব চালাক চতুর এবং তৃণভোজী।
ফক্স
এই জাতের খরগোশ এর উৎপত্তিস্থল আমেরিকা তবে বাংলাদেশের ঢাকা এবং যশোরের পাওয়া যায় এদের গায়ের রং কালো এবং আমরা বর্ণ একটি প্রাপ্ত বয়স্ক খরগোশের দৈহিক ওজন ২.৫ – ৩.১৭ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এরা দেখতে ছোট হলেও দেহ মাংসল।
ডাচ
এদের আদি নিবাস স্থান নেদারল্যান্ড তবে বাংলাদেশের ঢাকায় এদের দেখা যায় সাদা দাগ যুক্ত ধূসর রঙের এ খরগোশের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ওজন ১.৮০ – ২.২৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এদের মাংস উন্নত মানের এবং এদেরকে প্রাণী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
নিউজিল্যান্ড লাল
এদের উৎপত্তিস্থল নিউজিল্যান্ড তবে ঢাকা বংশাল এলাকায় দেখা যায় লালচে সাদা রঙের এই খরগোশের ওজন ৩.৬০ -৪.৫০ কেজি হতে পারে। এদের মাংস খুবই সুস্বাদু এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায় এরা ভালো তৃণভোজী।
নিউজিল্যান্ড সাদা
আদি নিবাস নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের ঢাকা যশোর খুলনা এবং বাগেরহাটে এদের পাওয়া যায় সাদা রঙের এই খরগোশের ওজন প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ৪.০৫ – ৫.৪৪ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। দ্রুত বর্ধনশীল, তৃণভোজী এই খরগোশের মাংস খুবই সুস্বাদু।
নিউজিল্যান্ড কালঃ
আদি নিবাস নিউজিল্যান্ড, তবে ঢাকা যশোর খুলনা অঞ্চলের এদের দেখা যায় সাদা রঙের খরগোশ দ্রুত বর্ধনশীল তৃণভোজী এবং এদের মাংস খুবই সুস্বাদু এদের ৪.০৫ – ৫.৪৪কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
বেলজিয়াম
জন্মস্থান বেলজিয়াম, ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেখা যায়। সাদা রঙের এই খরগোশের ওজন ৩.৫২ – ৪.৭০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। দ্রুত বর্ধনশীল জাতের এই খরগোশ তৃণভোজী এবং এদের মাংস খুবই সুস্বাদু।
সিন ছিলা
এর জন্মস্থান ফ্রান্স, তবে ঢাকা এবং যশোরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেখা যায়। এদের ওজন ২.৫০ – ২.৯৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এর মাংস অত্যন্ত ভালো মানের এবং এরা তৃনভোজী।
বাসস্থানঃ
স্বাভাবিকভাবে জাত অনুযায়ী মেজের আঁকার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সাধারণত প্রতি আটটি খরগোশের জন্য 5 ফুট X ২ ফুট একটি খাঁচা প্রয়োজন এবং প্রজননের সময় খরগোশের জন্য আলাদা ঘর ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি দেড় কেজি দৈহিক ওজনের জন্য এক বর্গ ফুট জায়গা প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে সাধারণত খরগোশ পালন করা হয়। সে ক্ষেত্রে বাচ্চা দেয়ার সময় এরা নিজেরাই নিজেদের গায়ের লোম ছিঁড়ে বাসা তৈরি করে।যদি খাচায় পালন করা হয় তবে বাচ্চা দেয়ার সময় আলাদাভাবে মেটারনিটি বক্স বা নেট ব্যবহার করা প্রয়োজন।
খরগোশের ঘরের বা খাঁচার পরিমাপঃ
প্রতিটি খরগোশের ঘরের দৈর্ঘ্য ৭৫ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৩৫ সেন্টিমিটার হওয়া প্রয়োজন।
মেটারনিটি বক্সের পরিমাপঃ
মেটারনিটি বক্স এর দৈর্ঘ্য ৪০ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৩০ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার। আর এই ঘরে জন্য যে দরজা রাখা হবে সেটি ১৫ সেন্টিমিটার।
খরগোশের খাদ্য:
বয়স এবং জাতভেদে বিভিন্ন খরগোশের খাদ্য গ্রহণ ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়।একটি বয়স্ক খরগোশ দৈনিক ১৩০ থেকে ১৪৫ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে। অন্যদিকে একটি দুধাল খরগোশ দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে। আর যদি খরগোশটা বাড়ন্ত হয় তাহলে প্রতিদিন ৯০ গ্রাম করে খাদ্য গ্রহণ করে।
খরগোশ কি কি খায়?
খরগোশ সাধারণত সবুজ শাকসবজি,ঋতু ভিত্তিক সবজি, পালং শাক, গাজর, মুলা, শাকের উচ্ছিষ্টাংশ, সবুজ ঘাস ইত্যাদি খায় আর দানাদার খাদ্যের মধ্যে চাল, গম, ভুট্টা ইত্যাদি খায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালনের জন্য মুরগির মত তৈরিকৃত খাদ্য খরগোশের রেশন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
খরগোশের প্রজনন
সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস বয়সে খরগোশ প্রথম প্রজনন কম হয়।তবে ঋতু এবং পর্যাপ্ত ওজন প্রাপ্তির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।গর্ভবতী খরগোশ ২৮ থেকে ৩৪ দিনের মধ্যে বাচ্চা দেয়।খরগোশ বাচ্চা জন্মের পর সাধারণত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায়। এই সময় বাচ্চার ওজন ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। একটি খরগোশ প্রতিবার দুই থেকে আটটি বাচ্চা দিতে পারে এবং একবার বাচ্চা দেওয়ার তিন মাস পরেই আবার বাচ্চা দিতে পারে।
খরগোশের রোগবালাইঃ
খরগোশ একটা ছোট প্রাণী।খরগোশ খুব সুন্দর এবং নরম প্রকৃতির প্রাণি। এটি খুব সহজে পোষ মানে। খরগোশের রোগ তুলনামূলকভাবে কম। খরগোশ পরিচ্ছন্ন জায়গায় থাকতে বেশি পছন্দ করে। ইহার ঘর সর্বদাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। ঘরে প্রয়োজনীয় আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ধুলাবালি পোকামাকড় প্রতিরোধ করতে হবে।কয়েকটি রোগ খরগোশের সাধারণত দেখা দেয়। নিম্নে অসুস্থ খরগোশের কয়েকটি লক্ষণ দেয়া হলো:
চোখ ও গান খাড়া থাকে শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায় খাদ্য ও পানি খেতে অনীহা প্রকাশ করে দৌড়াদৌড়ি করে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।ঘরে ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশি তাপমাত্রা থাকলে পুরুষ খরগোশের সাধারণত অনুর্বরতা দেখা যায়। তাছাড়া কক্সিডিওসিস গলাফুলা প্রভৃতি কয়েকটি রোগ সাধারণত দেখা যায়।
খরগোশ পালনের ঝুঁকিপূর্ণ দিক সমুহ
এখনো পর্যন্ত খরগোশ বাজারজাতকরণে তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া খরগোশের মাংস সবাই খেতে চায় না। খরগোশ অসুস্থ হলে বাঁচানো কঠিন হয়ে ওঠে। তাছাড়া খরগোশের প্রস্রাবে ভীষণ গন্ধ থাকে। যা অনেকের বিরক্তির কারণ হয়। খরগোশের বাচ্চা জন্মের পর প্রথম দশ দিন অধিক সর্তকতা অবলম্বন করতে হয় তা না হলে বাচ্চা টিকে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।